বিষয়টি বুঝতে খেলা দিয়েই শুরু করা যাক । পাড়ায় বা মহল্লায় কিশোর কিশোরীরা কোনো খেলা, ধরা যাক ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন বা টেবিল টেনিস খেলতে চায় । কী করা যেতে পারে? প্রথম কাজ খেলার সাথি সংগ্রহ করা । খেলার স্থান নির্বাচন করে রেফারি ঠিক করা ও মুরুব্বিদের অনুমতি নেওয়া । এরপর খেলার সামগ্রী, ক্রিকেট হলে ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প, ব্যাডমিন্টন হলে নেট, নেটের খুঁটি, কর্ক, ব্যাট, টেবিল টেনিস হলে টেবিল, ব্যাট, বল এগুলো কেনা। সাথিরা সবাই মিলে টাকা একত্র করে এগুলো কেনা। আবার তহবিলে কিছু অর্থ যেন থাকে যা থেকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফুরিয়ে যাওয়া সামগ্রী কেনা যায় । আরেকটি অতি দরকারি কাজ হলো, তহবিলের আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত সংরক্ষণ করা । একে মোটামুটি বলা যায় যে, সমবায় পদ্ধতিতে খেলা ।
কৃষিকাজ সম্পন্ন করতে এবং কৃষি থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেও সমবায় পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় । একে আমরা বলব কৃষি সমবায় । কৃষি সমবায়গুলো সাধারণত এলাকাভিত্তিক বা আঞ্চলিক হয় । আধুনিক কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় কৃষি বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে । তাছাড়া কৃষক উৎপন্ন ফসল ধরে রাখতে পারেনা । বাম্পার ফলন হলে ফসলের দাম পড়ে যায় । কোনো কোনো সময় এতোটাই পড়ে যায় যে উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। যদি এলাকায় তাঁদের নিজস্ব ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও বড় গুদাম থাকতো তাহলে এই আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যেত । কোনো একজন কৃষকের পক্ষে (খুব বড় ও ধনী কৃষক না হলে) এই সুবিধাগুলো অর্জন সম্ভব না হলেও প্রত্যেক সমবায়ী কৃষক তার জমি ও পুঁজির আনুপাতিক হারে মুনাফার শরিকানা লাভ করবেন, সাধারণত এটাই সমবায়ের ভিত্তি ।
গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে: ‘দশের লাঠি একের বোঝা' । অর্থাৎ একজনের পক্ষে যে কাজ অবহনযোগ্য বোঝা, দশজন একত্র হলে সেই বোঝা বরং সহজেই বহনযোগ্য হতে পারে ।
কৃষি সমবায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহারে কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে পারে । পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিসমূহ যেমন শস্যপর্যায় অবলম্বন, নিবিড় ও সমন্বিত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার, সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসলের নিরাপত্তা বিধান, যান্ত্রিক উপায়ে ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহ উত্তর পরিচর্যা, পরিবহন, গুদামজাতকরণ এবং বিপণন সকল ক্ষেত্রেই কৃষি সমবায় উচ্চমাত্রার সক্ষমতা এনে দিতে পারে এবং এভাবে উচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে। তদুপরি কৃষি সমবায় কৃষককে হঠাৎ বিপর্যয় সহনশীলতাও জোগায়। ফলে “দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ” এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এবার আমরা কৃষি সমবায়ের কিছু উপযোগিতা একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ।
সমবায়ের প্রকার
উদ্দেশ্য অনুযায়ী কৃষকগণ নানা ধরনের সমবায় গড়ে তুলতে পারেন ।
১। কৃষি মূলধন সমবায় (সঞ্চয় সমবায়) : সমবায়ের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ
২। কৃষি উপকরণ সমবায় : বীজ, সার, ঔষধ, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, গুদাম ইত্যাদি সংগ্রহ ও ব্যবহার
৩। কৃষি উৎপদান সমবায় : কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য
৪। কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ সমবায় : পণ্যমূল্য নির্ধারণ, ভর্তুকি গ্রহণ, কৃষিপণ্য বিক্রয় এবং এতদসংক্রান্ত হিসাব রক্ষার জন্য ।
কাজ : শিক্ষার্থীরা কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখে উপস্থাপন করবে । |
আরও দেখুন...